بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ তা’য়ালার জন্য, যিনি বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইল্ম দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ্ তা’য়ালা তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দেবেন।” (সূরা মুজাদালাহঃ আয়াত-১১)
দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা ﷺ-এর উপর, যিনি বলেছেন, “আল্লাহ্ তা’য়ালা যার কল্যাণ চান, তাকে ইলমে দ্বীনের গভীর জ্ঞান দান করেন।” (বুখারী-১১)
ইল্মে দ্বীন এত মর্যাদাপূর্ণ হওয়ার প্রধান কারণ হলো এর অপরিহার্যতা। আল্লাহ্ তা’য়ালার নির্দেশিত সঠিক পথে চলতে হলে দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ আলাইহিমুস্-সালাম এই জ্ঞান মানুষের মাঝে বিতরণ করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা ﷺ আল্লাহপ্রদত্ত ইল্মে দ্বীনের অফুরন্ত ভাণ্ডার তাঁর প্রিয় সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমের মাঝে বিতরণ করেন। এই ইল্মের আলোয় তাঁরা আল্লাহ্র প্রিয় ও খাঁটি বান্দা হিসেবে গড়ে ওঠেন।
সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম এই ইল্ম পৌঁছে দেন তাবেঈদের কাছে, তাবেঈরা তাবে-তাবেঈনদের কাছে, এবং তাবে-তাবেঈনরা তাঁদের পরবর্তী যুগের উলামায়ে কেরামের কাছে। এভাবেই যুগে যুগে ইলমে ওহী সংরক্ষিত, সংকলিত ও প্রচারিত হয়েছে। ইসলামের এই সোনালি জ্ঞানধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে পরবর্তী সময়ে অসংখ্য ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে ইলমে ওহীর শিক্ষা দেওয়া হতো এবং নববী আদর্শে জীবন গঠনের প্রচেষ্টা চলত।
বিশেষত ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসনের কঠিন সময়ে উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য যখন ইসলামী শিক্ষা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন উলামায়ে কেরাম অসংখ্য ত্যাগ স্বীকার করে এই ইলমের ধারা অব্যাহত রাখেন। সেই সংকটকালেই প্রতিষ্ঠিত হয় দারুল উলূম দেওবন্দ, যা ইসলামী শিক্ষার সংরক্ষণ ও প্রচার-প্রসারে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছে এবং করে যাচ্ছে।
দারুল উলূম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাকালীন মুরব্বি ছিলেন হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত মাওলানা কাসেম নানুতুবী রাহিমাহুল্লাহ। এই মহান ব্যক্তির নামানুসারে ১৪২০ হিজরী মোতাবেক ২০০০ ঈসায়ী সনে অত্র মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শাইখুল ক্বোররা হযরত ক্বারী ইব্রাহীম সাহেব রহ.-এর সুযোগ্য নাতি প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও দেশবরেণ্য মুরব্বী হযরতুল আল্লাম মুফতী মোঃ ফয়জুল্লাহ ইব্রাহিমী সাহেব হাফিজাহুল্লাহ রাজধানী ঢাকার গোলাপবাগ এলাকায় এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অত্র মাদ্রাসা ইসলামের খেদমতে একটি উজ্জ্বল মিনার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
তালীম ও তারবিয়াতের মাধ্যমে মুসলমান সন্তানদের সুন্নতের পাবন্দ হিসেবে গড়ে তোলা। ইল্মে দ্বীনের গভীর জ্ঞান ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে তাদের দক্ষ, যোগ্য ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত করা। ঈমান, আমল ও আখলাকে পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্বে গড়ে তুলে এমন এক প্রজন্ম সৃষ্টি করা, যারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ইল্মে ওহীর আলো সমাজের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেবে এবং লাখো মানুষের হেদায়েতের উসিলা হবে।
এ লক্ষ্যেই মাদ্রাসাটি তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, যেন এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বের হওয়া প্রতিটি শিক্ষার্থী দ্বীনের খাদেম ও মানবতার সেবক হয়ে ওঠে।
মাদরাসার বৈশিষ্ট্যসমূহ
*বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে পরিচালিত।
*দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকমণ্ডলী কর্তৃক পাঠদান।
*দুর্বল ও অমনোযোগী ছাত্রদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া।
*মাদরাসার অভ্যন্তরেই উস্তাদগণের নেগরানিতে পড়া শেখার ব্যবস্থা।
*নিয়মিত হাতের লেখা প্রশিক্ষণ ও ইংরেজি কোর্স।
*সদ্য হাফেজ ছাত্রদের জন্য বিশেষ দিকনির্দেশনা।
*নিরাপত্তা প্রহরী ও সিসিটিভি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা।
*নিজস্ব জেনারেটরের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।
*বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক)-এর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ।
*পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও শরিয়তসম্মত খেলাধুলার সুযোগ।
*আগ্রহ ও মেধা বিবেচনায় সরকারী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ।
শিক্ষা বিষয়ক বিভাগসমূহ
নূরানী বিভাগঃ শিশু শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত।
নাযেরা বিভাগঃ মাশকের মাধ্যমে তাজবিদসহ বিশুদ্ধ তেলাওয়াত শিক্ষা।
হিফজ বিভাগঃ স্বল্প সময়ে হিফয সম্পন্ন করার আন্তরিক প্রচেষ্টা।
কিতাব বিভাগঃ চতুর্থ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি (হেদায়াতুন্নাহু জামাত) পর্যন্ত,
(ক্রমান্বয়ে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত ইনশাআল্লাহ্)।
আরও পড়ুন:
কোন বিভাগে ভর্তি করাবেন আপনার সন্তানকে?
বাৎসরিক ছুটির তালিকা এবং সাক্ষাৎ ও টেলি যোগাযোগের সময়সূচি
Facebook Comments