ইসলামী শিক্ষার প্রধান ও সর্বোচ্চ উৎস হলো পবিত্র কুরআন। কুরআনের জ্ঞানকে প্রধানত দুইটি ভাগে বিভক্ত করা যায়—একটি কুরআন তিলাওয়াত ও
শুদ্ধ উচ্চারণের সাথে সম্পর্কিত এবং অপরটি কুরআনের অর্থ, ব্যাখ্যা ও হুকুম-আহকামের সাথে সংশ্লিষ্ট।
যেসব শিক্ষা বিভাগ কুরআন তিলাওয়াতের সাথে সম্পর্কিত, তার মধ্যে অন্যতম হলো নাযেরা বিভাগ ও হিফজ বিভাগ। নাযেরা বিভাগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিশুদ্ধ তাজবীদসহ কুরআন তিলাওয়াত শিখে, আর হিফজ বিভাগে তারা সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করে। যদিও উভয় ক্ষেত্রেই কুরআন পাঠই মূল বিষয়, তবে এদের উদ্দেশ্য ও শিক্ষার ধরণ ভিন্ন।
নূরানি বিভাগে কায়দা ও আমপারা সম্পন্ন করার পর একজন শিক্ষার্থী নাযেরা বিভাগে ভর্তি হতে পারে, যেখানে তাকে অল্প অল্প করে আয়াত পড়ানো হয় এবং পর্যায়ক্রমে সম্পূর্ণ কুরআন খতম করানো হয়। এর পাশাপাশি, শিক্ষার্থীদের হাদীস শরীফ, তাজবিদ, দোয়া-মাসাইল, ও হাতের লেখা শেখানো হয়, যা তাদের মৌলিক ইসলামি শিক্ষার ভিত্তি গড়ে তোলে।
নাযেরা বিভাগে একজন শিক্ষার্থী কতদিন পড়বে, তা নির্ভর করে তার লক্ষ্য ও সামর্থ্যের ওপর। যারা হাফেয হতে চায়, তাদের জন্য কুরআন তিলাওয়াতের শুদ্ধতা ও সাবলীলতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সাধারণত শিক্ষার্থীকে অন্তত ১০ বার বিশুদ্ধভাবে কুরআন খতম করতে হয়, যাতে সে নির্ভুলভাবে দ্রুত তিলাওয়াত করতে সক্ষম হয়। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হিফজের উদ্দেশ্যেই নাযেরা বিভাগে ভর্তি হয়। তবে যাদের বয়স বেশি বা হিফজ করার উপযুক্ত স্মরণশক্তি নেই, তাদের জন্য দুই-তিনবার কুরআন খতম করাই যথেষ্ট। এরপর তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কিতাব বিভাগের উপযুক্ত শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারে। যারা হাফেয হতে আগ্রহী, তাদের জন্য বিশেষ একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। এতে উস্তাদ শিক্ষার্থীর তিলাওয়াতের শুদ্ধতা, গতি ও ধারাবাহিকতা মূল্যায়ন করেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে শিক্ষার্থীকে হিফজ বিভাগের জন্য যোগ্য বলে বিবেচনা করা হয় এবং সে আনুষ্ঠানিকভাবে কুরআন মুখস্থ করার পথে অগ্রসর হতে পারে।
নাযেরা বিভাগ সম্পন্ন করার পর শিক্ষার্থীরা হিফজ বিভাগে ভর্তি হতে পারে, যেখানে তাদের মূল লক্ষ্য হয় পুরো কুরআন কারীম মুখস্থ করা। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ আয়াত মুখস্থ করা ও পূর্বে মুখস্থকৃত অংশ বারবার পুনরায় পড়া ও শোনানোর মাধ্যমে তারা ধাপে ধাপে হাফেযে কুরআন হওয়ার পথে এগিয়ে যায়।
তবে শুধু কুরআন মুখস্থ করাই হিফজ বিভাগের শেষ ধাপ নয়। বরং শিক্ষার্থীকে নিয়মিত উস্তাদের কাছে কুরআন শুনিয়ে মুখস্থ শক্তিশালী করতে হয়, যেন তা চিরস্থায়ীভাবে হৃদয়ে স্থির হয়ে যায়। তারা পুরো কুরআন দ্রুত, মাঝারি ও ধীরগতিতে না দেখে উস্তাদকে কয়েকবার শুনায়। এভাবে উস্তাদের কাছে নির্ভুলভাবে কয়েকবার শুনাতে পারলে শিক্ষার্থীকে হিফজ সমাপ্তির যোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়।
👉 হিফজ বিভাগের পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পড়ুন
👉 হিফজ বিভাগের দৈনন্দিন সময়সূচি সম্পর্কে জানতে পড়ুন
হিফজ সম্পন্ন হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের কিতাব বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে, যেখানে তারা ইসলামের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে। এছাড়া, কেউ চাইলে তিলাওয়াতের মান উন্নত করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে পারে বা ইজাজাহ গ্রহণের মাধ্যমে কুরআন শিক্ষার উচ্চতর স্তরে যেতে পারে।
আমাদের মাদরাসার নাযেরা বা হিফজ বিভাগে ভর্তি করাতে চাইলে কল করুন 01997979727 নাম্বারে।
আমাদের মাদরাসা সম্পর্কে জানতে মাদরাসার ফেসবুক পেইজেও মেসেজ দিতে পারেন।
Facebook Comments